অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রীসভা সমূহ (১৯৩৭-১৯৪৭)
ভারত শাসন আইন প্রণয়নের পর থেকে ভারত ভাগ আইন পর্যন্ত অবিভক্ত বাংলায় চারটি মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। তার মধ্যে প্রথম মন্ত্রিসভা গঠিত হয় ১ এপ্রিল ১৯৩৭ সালে প্রাদেশিক নির্বাচনের মাধ্যমে। এই নির্বাচনে কোন দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করতে পারেনি।

ছবি Alal Mahmud
ফলে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বাধীন কৃষক প্রজা পার্টি (কেপিপি), মুসলিম লীগ, সঙ্খালগু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি এবং নিম্ন বর্ণের হিন্দু প্রতিনিধিদের সাথে জুটবদ্ধ হয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করে যেখানে ফজলুল হক ছিলেন অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী। উক্ত মন্ত্রিসভায় ফজলুল হক ছাড়া আরও দশজন মন্ত্রী ছিলেন এর মধ্যে ৫ জন হিন্দু এবং ৫ জন মুসলিম।
পরবর্তীতে মুসলিম লীগের সাথে বিরোধ এবং কৃষক প্রজা পার্টির নেতৃবৃন্দের বিরোধিতায় ২ ডিসেম্বর ১৯৪১ সালে ফজলুল হক প্রথম মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন এবং কৃষক প্রজা পার্টির সেকুলার (ধর্মনিরপেক্ষ) অংশ এবং কংগ্রেসের হিন্দু সদস্যদের নিয়ে আবার মন্ত্রিসভা গঠন করেন যা ফজলুল হকের দ্বিতীয় মন্ত্রিসভা নামে খ্যাত। কিন্তু মুসলিম লীগের বিরোধিতা, ব্রিটিশ বিরোধী কংগ্রেসের সদস্যদের মন্ত্রিসভায় স্থান দেয়া এবং মুসলিম ব্যবসায়ী ও সংবাদমাধ্যমের বিরোধিতার কারনে এই মন্ত্রিসভা খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ১৯৪৩ সালের মার্চ মাসে ফজলুল হক পুনরায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
তারপর ১৯৪৩ সালের এপ্রিল মাসে মুসলিম লীগের প্রতিনিধি খাজা নাজিমুদ্দিন মন্ত্রিসভা গঠন করেন যা অবিভক্ত বাংলার তৃতীয় মন্ত্রিসভা হিসেবে পরিচিত। এই মন্ত্রিসভার সবচেয়ে বড় ত্রুটি ছিল হোসেন শহীদ সুহরাওয়ারদি এবং আবুল হাসিমের মত নেতাদের মন্ত্রিসভায় জায়গা না দেয়া। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৪৫ সালের মার্চ মাসে নাজিমুদ্দিন তার মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
এরপর ১৯৪৬ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনের মাধ্যমে সুহরাওয়ারদি বাংলার চতুর্থ মন্ত্রিসভা গঠন করেন এবং ভারত পাকিস্তান বিভক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি অবিভক্ত বাংলার সর্বশেষ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ইতিহাসে পরিচিত।